get error get error অন্তরের ১০টি রোগের বর্ণনা – Darsemansoor

ইসলামী যিন্দেগী এ্যাপের নতুন আপডেট এসেছে। আমরা যারা মোবাইল ফোন ব্যবহারকারী, আমরা সবাই ইসলামী যিন্দেগী এ্যাপটি আপডেট করে নেই।

ইসলামী যিন্দেগী এ্যাপ ব্যবহারকারীদের সকলকে জানানো যাচ্ছে যে, অনেক লম্বা সময় ধরে আমাদের ২টি ওয়েবসাইটই হ্যাক হচ্ছিল। ফলে আমাদের ব্যবহারকারীরা ঠিকমতো কিতাব, প্রবন্ধ ডাউনলোড করতে, পড়তে এবং বয়ান ডাউনলোড করতে, শুনতে অসুবিধা বোধ করছিল। এছাড়াও আরো অনেক ধরনের সমস্যা হচ্ছিল। ফলে ব্যবহারকারীদের সুবিধার জন্য এবং হ্যাকারদের থেকে আরো বেশী নিরাপদে থাকার জন্য আমরা আমাদের এ্যাপটি আপডেট করেছি।

আলহামদুলিল্লাহ, বর্তমান আপডেটে অনেক নতুন দীনী প্রয়োজনীয় জিনিস সংযোগ করা হয়েছে যা যে কোন দীনদার ব্যবহারকারীর জন্য আনন্দের বিষয় হবে বলে আশা করি।

যেহেতু আমরা সম্পূর্ণ নতুনভাবে কাজ করেছি তাই এ্যাপটি ব্যবহারের ক্ষেত্রে প্রথম দিকে আপনাদের সমস্যা মনে হতে পারে। কিন্তু পরবর্তীতে তা আগের চেয়ে আরো সহজ মনে হবে ইনশাআল্লাহ। আর আমরা এখন পুরোদমে কাজ করে যাচ্ছি তাই আপনাদের নজরে কোন ভুল বা অসঙ্গতি নজরে পড়লে আমাদের উপর নারাজ না হয়ে সুপরামর্শ দেয়ার বিশেষ আবেদন রইলো।

পরামর্শ দেয়ার ঠিকানা: islamijindegi@gmail.com

এতোদিন আমরা ২টি ওয়েবসাইট চালিয়েছি www.darsemansoor.com এবং www.islamijindegi.com আমরা এই দুটি ওয়েবসাইটের সমস্ত তথ্য সহ আরো অনেক জিনিস নতুন সংযোগ করে একটি ওয়েবসাইট তৈরী করেছি। সবাইকে উক্ত ওয়েবসাইটটি ভিজিট করার জন্য বিশেষভাবে অনুরোধ জানাচ্ছি।
www.islamidars.com

হযরতওয়ালা শাইখুল হাদীস মুফতী মনসূরুল হক দা.বা. এর বয়ান এবং সমস্ত কিতাব, প্রবন্ধ, মালফুযাত একসাথে ১টি অ্যাপে পেতে ইসলামী যিন্দেগী অ্যাপটি আপনার মোবাইলে ইন্সটল করুন। Play Storeএবং  App Store

তাযকিয়া ও আত্মশুদ্ধি বিষয়ক পরচা

ভূমিকাঃ অন্তরের ১০টি রোগের চিকিৎসা করে অন্তরের ১০টি গুণ হাসিল করার নাম তাযকিয়া বা আত্মশুদ্ধি। যা শরী‘আতের দৃষ্টিতে ফরযে আইন এবং এর জন্যে কোন ইজাযত প্রাপ্ত শাইখের সাথে ইসলাহী সম্পর্ক করাও ফরযে আইন। বাইআত হওয়া ফরয বা ওয়াজিব নয় বরং এটা মুস্তাহাব, এর উপর আত্মশুদ্ধি নির্ভর করে না। আত্মশুদ্ধি অর্জন হলে সমস্ত জাহেরী গুনাহ বর্জন করা এবং জাহেরী ইবাদত-বন্দেগী করা সহজ হয়ে যায় এবং সেই বন্দেগীকে তাকওয়ার যিন্দেগী বা সুন্নতী যিন্দেগী বলে এবং সে ব্যক্তি তথন আল্লাহর ওলী হয় এবং তার হায়াতে তাইয়িবা তথা পবিত্র জীবন নসীব হয়। আল্লাহ তা‘আলা সকলকে এ দৌলত নসীব করেন, আমীন।

অন্তরের ১০টি রোগের বর্ণনা

১. বেশী খাওয়া এবং ভাল খানার প্রতি লোভী হওয়া

বেশি খাওয়া এবং উদর পূর্তি করে খাওয়া অসংখ্য গুনাহের মূল। এজন্য হাদীসে পাকে ক্ষুধার্ত থাকার অনেক ফযীলত বর্ণিত হয়েছে। রাসূল আকরাম সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেনঃ “মানুষের জন্য পূর্ণ করার ক্ষেত্রে পেটের থেকে খারাপ কোন পাত্র নেই।” (বুখারী হা: নং ৪৩৪৩)

খানা কম খাওয়ার উপকারসমূহ

১. অন্তরে স্বচ্ছতা সৃষ্টি হয়। ২. দিল নরম হয় এবং মুনাজাতে স্বাদ অনুভূত হয়। ৩. অবাধ্য নফস অপদস্থ ও পরাজিত হয়। ৪. নফসকে শাস্তি দেওয়া হয়। ৫. কুপ্রবৃত্তি দুর্বল হয়ে যায়। ৬. বেশী নিদ্রা আসে না এবং ইবাদত কষ্টকর হয় না। ৭. দুনিয়াবী চিন্তাভাবনা কমে আসে এবং জীবিকা নির্বাহের বোঝা হাল্কা হয়ে যায়।

উল্লেখ্য বর্তমান যামানার লোকেরা পূর্বের তুলনায় অনেক কমজোর হওয়ায় তাদের খানার মুজাহাদার ব্যাপারে হাকীমুল উম্মত হযরত থানভী রহ. লিখেছেনঃ এ যমানায় খানার মুজাহাদার অর্থ হলো পেট পূর্ণ হতে ২/৪ লুকমা বাকী থাকা অবস্থায় খানা শেষ করা এবং নফস বা শরীর দিয়ে খুব কাজ নেয়া।

২. অধিক কথা বলা

যবান হল অন্তরের দূত, অন্তরের যাবতীয় নকশা ও কল্পনাকে যবানই প্রকাশ করে। এজন্য যবানের ক্রিয়া বড় মারাত্মক হয়।

এজন্যই আল্লাহ পাক ইরশাদ করেছেনঃ তোমাদের প্রত্যেকটা কথাই সংরক্ষণ করা হয়। (সূরা কাফ-১৮)

হাদীসে পাকে ইরশাদ হয়েছেঃ যে ব্যক্তি নিজের লজ্জাস্থান এবং জিহবাহর ব্যাপারে আমাকে নিশ্চয়তা দিতে পারবে আমি তার জন্য জান্নাতের নিশ্চয়তা দিব। (বুখারী হা: নং ৬৪৭৪)

কথা বেশী বলার ক্ষতিসমূহ

১. মিথ্যা বলায় অভ্যস্ত হয়ে পড়া। ২. গীবতে জড়িয়ে পড়া। ৩. অনর্থক ঝগড়া করা। ৪. অতিরিক্ত হাসাহাসি করা, যাদ্দরুন দিল মরে যায়। ৫. অন্যের অযাচিত প্রশংসা করা।

চুপ থাকার উপকারিতা

১. মেহনতবিহীন ইবাদত। ২. সাম্রাজ্যবিহীন দাপট। ৩. দেওয়ালবিহীন দূর্গ। ৪. অস্ত্রবিহীন বিজয়। ৫. কিরামান কাতবীনের শান্তি। ৬. আল্লাহভীরুদের অভ্যাস। ৭. হেকমতের গুপ্তধন। ৮. মূর্খদের উত্তর। ৯. দোষসমূহ আবৃতকারী। ১০. গুনাহসমূহ আচ্ছাদনকারী।

৩. অহেতুক গোস্বা করা

এটা অত্যন্ত খারাপ একটি আত্মিক ব্যাধি। রাগ দোযখের আগুনের একটি টুকরা এজন্য রাগান্বিত ব্যক্তির চেহারা লাল হয়ে যায়। এর কারণে মারামারি ঝগড়াঝাটি, গালাগালী, এমনকি খুনাখুনী পর্যন্ত সংঘটিত হয়।

এমনকি অনেকে বৃদ্ধি বয়সে এসে তুচ্ছ ঘটনায় বিবিকে তিন তালাক দিয়ে পস্তাতে থাকে। মহানবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন: ঐ ব্যক্তি বাহাদুর নয় যে যুদ্ধের ময়দানে দুশমনকে নীচে ফেলে দেয় বরং ঐ ব্যক্তি বাহাদুর যে রাগের মুহূর্তে নিজেকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে সক্ষম। (বুখারী হাদীস নং ৬১১৪)

গোস্বার চিকিৎসা

দুইভাবে গোস্বার চিকিৎসা করা হয়। ১. ইলমী বা জ্ঞানগত পদ্ধতিতে ২. আমলী বা কার্যগত পদ্ধতিতে।

ইলমী চিকিৎসা হলঃ গোস্বার সময় চিন্তা করতে হবে গোস্বা কেন আসে? গোস্বা আসার কারণ তো এটাই যে, যে কাজটি আল্লাহর ইচ্ছায় হয়েছে সে কাজটি আমার মনের মোতাবেক কেন হয়নি? কেন এটা আল্লাহর ইচ্ছা অনুযায়ী হল? তার মানে আমি আল্লাহর ইচ্ছাকে আমার ইচ্ছার অনুগত বানাতে চাই? নাউযুবিল্লাহ! এভাবে চিন্তা করলে গোস্বার বদ অভ্যাস দূর হয়ে যাবে।

আর আমলী চিকিৎসা হলঃ

গোস্বা আসলে ১ (أعُوْذ ُبِاللهِ مِنَ الشيْطَانِ الرَّجِيْمِ) পড়বে, ২. নিজ অবস্থা পরিবর্তন করবে। অর্থাৎ, দাঁড়ানো থাকলে বসে পড়বে, বসে থাকলে শুয়ে পড়বে। ৩. যার প্রতি গোস্বার উদ্রেক হয় তার সামনে থেকে সরে পড়বে। ৪. তারপরও গোস্বা ঠান্ডা না হলে উযু করবে, নিজ গালকে মাটিতে লাগিয়ে দিবে। এভাবে আমল করলে গোস্বা দূর হয়ে যাবে ইনশাআল্লাহ।

৪. হিংসা করা

হিংসার সংজ্ঞাঃ কোন ব্যক্তিকে আরাম আয়েশ বা প্রাচুর্যপূর্ণ অবস্থায় দেখে তার সে নেয়ামত দূরীভূত হয়ে নিজের জন্য হাসিল হওয়ার আকাংখা করা। হিংসা অত্যন্ত জঘন্য একটি ব্যাধি।

আল্লাহ তা‘আলা হাদীসে কুদসীতে বলেনঃ আমার বান্দার উপর নেয়ামত দেখে হিংসাকারী কেমন যেন আমার ঐ বন্টনের ব্যাপারে অসন্তুষ্ট যা আমি আমার বান্দাদের মধ্যে করেছি। নাউযুবিল্লাহ। (এহয়াউ উলুমুদ্দীন-৩/২৯২)

রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেনঃ “হিংসা নেকী সমূহকে এমনভাবে জ্বালিয়ে দেয় যেমন আগুন শুকনো লাকড়ীসমূহকে জ্বালিয়ে দেয়”। অবশ্য অন্যের কোন নেয়ামত দেখে সেটা তার মধ্যে বহাল থেকে নিজের জন্য হাসিল হওয়ার আকাংখা করা যাকে “গিবতা” বা “ঈর্ষা” বলে সেটা জায়েয। (আবূ দাউদ হাদীস নং-৪৯০৩)

৫. কৃপণতা ও সম্পদের মোহ

সম্পদের মোহই মূলতঃ কৃপণতার মূল আর সম্পদের মুহব্বাত মানুষকে ‍দুনিয়ার দিকে আকৃষ্ট করে। যে কারণে আল্লাহ তা‘আলার প্রতি মুহব্বাত দুর্বল হয়ে যায়।

এ কারণেই কুরআনে কারীমে আল্লাহ পাক ইরশাদ করেনঃ যার ভাবার্থ হল: আল্লাহর দেয়া সম্পদে কৃপণতাকারীদের জন্য পরকালে ভয়াবহ পরিস্থিতি হবে। (সূরা আলে ইমরান আয়াত ১৮০)

 হাদীসে পাকে ইরশাদ হয়েছেঃ তোমরা লোভকে নিয়ন্ত্রণ কর কারণ এটা তোমাদের পূববর্তী লোকদেরকে ধ্বংস করেছে। (সহীহ মুসলিম হাদীস নং-২৫৭৮)

বাস্তবিক পক্ষে সম্পদের মোহ মানুষকে আল্লাহ পাক থেকে উদাসীন করে দেয়। এই সম্পদ মুসলমানদের জন্য ভয়াবহ এক ফেতনা।

অবশ্য শুধু সম্পদ কোন নিন্দনীয় ব্যাপার নয়। বিশেষতঃ যদি সে সম্পদ দীনী কাজে ব্যয় করা হয়। নতুবা জরুরত পরিমাণ সম্পদ থাকলে কোন অসুবিধা নেই, যাতে কারো নিকট ভিক্ষার হাত বাড়াতে না হয়। এবং আত্মসম্মান নিয়ে বেঁচে থাকা যায়।

৬. খ্যাতি ও পদের মোহ

খ্যাতি ও পদের মোহ অত্যন্ত নিকৃষ্ট একটি আত্মিক ব্যাধি। এর দ্বারা অন্তরে নিফাক সৃষ্টি হয়। এজন্য নিজেকে সব সময় লুকিয়ে রাখা চাই, খ্যাতির পিছনে পড়া অনুচিত। আল্লাহ তা‘আলা ইরশাদ করেনঃ এই পরকাল আমি তাদের জন্যে নির্ধারিত করি, যারা দুনিয়ার বুকে ঔদ্ধত্য প্রকাশ করতে ও অনর্থ সৃষ্টি করতে চায় না। (সূরা কিসাস-৮৩)

হাদীসে পাকে রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেনঃ “যদি কোন বকরীর পালের মধ্যে দুটি নেকড়ে প্রবেশ করে তাহলেও সেটা এত ক্ষতি করে না যতটা সম্পদ ও পদের মুহাব্বত দীনদার মুসলমানদের দীনের ক্ষতি করে।” (তিরমিযী হা: নং ২৩৮১, মুঃ আহমাদ হাঃ ১৫৭৯০)

অবশ্য যদি কামনা-বাসনা ছাড়াই আল্লাহ তা‘আলা কাউকে সুখ্যাতি দান করেন হবে সেটা দোষণীয় নয়। যেমন নবীগণ আ. সাহাবীগণ রাযি. তাবেয়ী ও তাবে তাবেয়ীগণ রহ. তাঁদের প্রত্যেকেরই দুনিয়াতে খ্যাতি ছিল কিন্তু তাঁরা কেউ দুনিয়াতে খ্যাতি কামনা করেননি।

৭. দুনিয়াপ্রীতি

দুনিয়াপ্রীতি শুধু সম্পদ ও পদের মুহব্বাতকেই বলেনা বরং ইহজীবনে যে কোন অবৈধ কামনাকে পূর্ণ করার প্রচেষ্টা ও খাহেশকেই দুনিয়াপ্রীতি বলে। অবশ্য দীনী ইলম, মারিফাতে ইলাহী এবং সৎকর্ম যেগুলোর ফলাফল মৃত্যুর পর পাওয়া যাবে, সেগুলো যদিও দুনিয়াতেই সংঘটিত হয় কিন্তু বাস্তবিকপক্ষে এসবের মুহব্বাতকে দুনিয়ার মুহব্বাত বলে না বরং এগুলো হলো আথেরাতের মুহব্বাত।

দুনিয়ার জীবনের নিন্দাবাদ করে মহান আল্লাহ তা‘আলা ইরশাদ করেছেন “দুনিয়ার জীবনের সবকিছুই ধোঁকার সামান।” (সূরা আল ইমরান, আয়াত- ১৮৫)

অন্যত্র ইরশাদ হয়েছে যে, “দুনিয়ার সামানপত্র, রং তামাশা ও খেলাধুলা ছাড়া আর কিছুই নয়।” (সূরায়ে হাদীদ, আয়াত-২০)

রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেনঃ দুনিয়া হল একটি মরা জন্তু যারা এটাকে লক্ষবস্তু বানিয়েছে তারা হল কুকুরের দল। দুনিয়ার ভোগ বিলাসকে উদ্দেশ্য না করে দুনিয়াকে আখেরাতের প্রস্তুতির হিসেবে ব্যবহার করতে হবে। তাহলে কামিয়াব হওয়া যাবে।

৮. অহংকার করা

তাকাব্বুর বা অহংকার এর অর্থ হলঃ প্রশংসনীয় গুণাবলীর মধ্যে নিজেকে অন্যের তুলনায় শ্রেষ্ঠ মনে করা এবং অন্যকে তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করা, হক ও সত্যকে অস্বীকার করা। বলা বাহুল্য যে, যখন মানুষ নিজের ব্যাপারে এরূপ ধারণা পোষণ করে এবং আল্লাহর দেয়া গুণসমূহকে নিজের কৃতিত্ব মনে করে তখন তার নফস ফুলে উঠে, অতঃপর কাজকর্মে এর প্রতিক্রিয়া প্রকাশ পেতে থাকে, উদাহরণস্বরূপ: রাস্তায় চলার সময় সাথীদের আগে আগে চলা, মজলিসে সদরের মাকামে বা সম্মানিত স্থানে বসা। অন্যদেরকে তাচ্ছিল্যের সাথে দেখা বা আচরণ করা অথবা কেউ আগে সালাম না দিলে তার উপর গোস্বা হওয়া, কেউ সম্মান না করলে তার উপর অসন্তুষ্ট হওয়া, কেউ সঠিক উপদেশ দিলেও নিজের মর্জির খেলাফ হওয়ায় সেটাকে অবজ্ঞা করা। হক কথা জানা সত্ত্বেও সেটাকে না মানা। সাধারণ মানুষকে এমন দৃষ্টিতে দেখা যেমন গাধাকে দেখা হয় ইত্যাদি।

পবিত্র কুরআন ও হাদীসের অনেক আয়াতে ‘অহংকার’ এর নিন্দাবাদ করা হয়েছে, অহংকারের কারণেই ইবলীস বেহেশত থেকে বিতাড়িত হয়েছে। অহংকারের কারণেই আবূ জাহাল মহানবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে সত্য জেনেও অস্বীকার করেছে।

৯. আত্মতুষ্টি

আত্মতুষ্টি বা নিজেকে নিজে সঠিক মনে করা মূলত: এটা অহংকারেরই ভূমিকা বা প্রাথমিক রূপ। পার্থক্য শুধু এতটুকু যে, অহংকারের ক্ষেত্রে অন্যদের তুলনায় নিজের নফসকে বড় মনে করা হয় আর আত্মতুষ্টির মধ্যে অন্যদের সাথে তুলনা করা ছাড়াই স্বীয় নফসকে নিজ খেয়ালে কামেল মনে করা হয়। এবং আল্লাহ প্রদত্ত নেয়ামতসমূহকে নিজের হক মনে করা হয়, অর্থাৎ, এটাকে আল্লাহর দান ও অনুগ্রহ মনে করা হয় না এবং সেটা যে কোন মুহূর্তে ছিনিয়ে নেয়া হতে পারে সে ব্যাপারে শংকাহীন হয়ে পড়া। এটাকেই তাসাওউফের পরিভাষায় “উজুব” বা “খোদপছন্দী” বলে। এটার চিকিৎসা করা না হলে এটাই কিছু দিন পরে অহংকারে পরিণত হয়ে বান্দাকে ধ্বংসের পথে নিয়ে যায়।

১০. লোক দেখানো (রিয়া বা প্রদর্শনী)

রিয়া বলা হয় নিজ ইবাদত ও ভাল আমলের মাধ্যমে মানুষের অন্তরে বড়ত্ব ও মর্যাদার আকাংখা করা।

এটা ইবাদতের মূল উদ্দেশ্যের সম্পূর্ণ বিপরীত ব্যাপার। কেননা ইবাদতের দ্বারা মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করা। এখন যেহেতু এই আমলের উদ্দেশ্যের মধ্যে অন্য শরীকও চলে এসেছে, বিধায় একে “শিরিকে আসগার” বা ছোট শিরক বলা হয়।

কুরআনে কারীমে আল্লাহ পাক ইরশাদ করেনঃ মানুষকে শুধুমাত্র আল্লাহর উদ্দেশ্যে ইবাদত করার হুকুম করা হয়েছে। (সূরায়ে বায়্যিনাহ আয়াত-৫)

হাদীসে পাকে ইরশাদ হয়েছেঃ “কিয়ামতের দিন সবপ্রথম যে তিন শ্রেণীর ব্যক্তিকে অধোমুখে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে তারা সবাই হবে রিয়াকার।” তারা সারা জীবন দীনের পথে থেকেও অন্তরের একটি রোগের কারণে সকলের পূর্বে জাহান্নামে যাবে। রিয়াকে “শিরকে খফী” বা গোপন শিরকও বলা হয়।

রিয়ার সূরতসমূহঃ

মোট ছয় ভাবে রিয়া হতে পারে। ১। শরীরের দ্বারা ২। অঙ্গভঙ্গির দ্বারা ৩। আকৃতি অবলম্বনের দ্বারা ৪। কথাবার্তার দ্বারা ৫। আমলের দ্বারা ৬। নিজ মুরীদ ও ভক্তের আধিক্য ও নিজের ইবাদত বন্দেগীর বর্ণনার দ্বারা।